কিডনির সমস্যার প্রথম সতর্ক সংকেত
শরীরের ভেতরে কোনো রোগ শুরু হলে তা প্রথমদিকে সহজে টের পাওয়া যায় না। বিশেষ করে কিডনির সমস্যা এমন এক নীরব ঘাতক, যা অনেক সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখায় না। চুপিচুপি কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যায়, আর আমরা বুঝতেও পারি না যে ভেতরে ধীরে ধীরে বিপদ ঘনিয়ে আসছে।
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা ফিল্টারের মতো কাজ করে। এটি রক্ত পরিশোধন করে, শরীরের বর্জ্য ও টক্সিন (toxin) বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, লবণের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং রক্ত তৈরিতেও সাহায্য করে। কিন্তু যদি কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করে, শরীর তখন আগেভাগেই কিছু ইশারা দিতে শুরু করে। এই ইশারাগুলো চিনে নিতে পারলেই বোঝা যায়, কিডনি সুস্থ আছে কি না। চলুন, সেই লক্ষণগুলো জেনে নিই—
✰ সবসময় শরীরে দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হওয়া
যখন কিডনি রক্ত সঠিকভাবে ফিল্টার করতে পারে না, তখন শরীরে বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন জমতে থাকে। ফলে সবসময় দুর্বল লাগে, মাথা ভার মনে হয় এবং কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় এর পেছনে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াও(Anaemia) দায়ী থাকে। ( অ্যানিমিয়াও অর্থ হলো : রক্তে লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হওয়া।)
✧ঠিকমতো ঘুম না হওয়া
যদি কিডনি ঠিকভাবে রক্ত থেকে টক্সিন ফিল্টার করতে না পারে, তাহলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে থাকে। এতে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, আর দীর্ঘমেয়াদে ওজন বাড়া বা স্থূলতা সহ ঘুমের ব্যাঘাতও হতে পারে—যা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
✧ত্বক শুকনো ও ফাটল দেখা দেওয়া
কিডনি শরীরে খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হাড়কে মজবুত রাখে। যখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ ও ফেটে যেতে পারে। এটি কিডনির অগ্রগামী সমস্যার (Advanced Kidney Disease) অ্যাডভান্স কিডনি রোগের একটি সংকেত হতে পারে।
✧রাতে বা দিনে বারবার প্রস্রাব লাগা
“বিশেষ করে রাতে বারবার প্রস্রাব লাগা কিডনির সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। এটি ঘটে যখন কিডনির ফিল্টার ঠিকভাবে কাজ করে না। তবে এমন সমস্যা ইউরিন ইনফেকশন বা প্রোস্টেট বড় হওয়াতেও হতে পারে।
✧প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেওয়া
সুস্থ কিডনি রক্তে থাকা রক্তকণিকাকে শরীরে ধরে রাখে। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তকণিকা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হতে পারে। এটি কিডনির সমস্যার পাশাপাশি কিডনি পাথর, সংক্রমণ বা টিউমারের লক্ষণও হতে পারে।
✧প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা বা বাবল থাকা
যদি প্রস্রাবে ডিমের মতো ফেনা বা বাবল দেখা দেয়, তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে প্রোটিন লিক হচ্ছে। এর মানে কিডনির ফিল্টার ঠিকভাবে কাজ করছে না এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যাচ্ছে।
✧চোখের নিচে ফুলে যাওয়া
চোখের নিচে বা চারপাশে হঠাৎ ফোলা দেখা দিলে বোঝা যায় শরীরে বেশি প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বের হচ্ছে। এর মানে কিডনি এই প্রোটিন লিক বন্ধ করতে পারছে না।
✧পা ও গোড়ালি ফোলা
যদি কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে শরীরে সোডিয়াম জমে পানি ধরে রাখে। এতে পা ও গোড়ালি ফোলা দেখা দেয়। তবে এই সমস্যা হৃদরোগ, লিভার বা পায়ের শিরার দীর্ঘমেয়াদি রোগের কারণে ও হতে পারে।
✧আপনি এখন কী করবেন?
আপনি যদি এসব লক্ষণ নিজের বা পরিচিত কারও মধ্যে দেখতে পান, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সাধারণ কিছু পরীক্ষা যেমন—রক্ত পরীক্ষা (Creatinine, Urea) প্রস্রাব পরীক্ষা (Protein, RBC) এবং আলট্রাসনোগ্রাম করানো যেতে পারে।
এই পরীক্ষাগুলো করলেই কিডনির অনেক বিষয় বোঝা যায়।
কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় নীরব থাকে, কিন্তু একবার গুরুতর হয়ে গেলে এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই সময়মতো লক্ষণগুলো চিহ্নিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাবধানতা।
শরীরের সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দিন, নিয়মিত পরীক্ষা করান, এবং সুস্থ জীবন যাপন করুন।
Post a Comment