Surgery এর আগে খাওয়া কেন নিষিদ্ধ? জানুন বৈজ্ঞানিক দিক
আপনি কি কখনো ভেবেছেন, কেন সার্জারির (অস্ত্রোপচারের) আগে রোগীদের কঠোরভাবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রাখতে বলা হয়? এমনকি এক টুকরো ফল, একমুঠো বাদাম কিংবা এক কাপ চাও নিষিদ্ধ! চিকিৎসকরা বলছেন, এটি কেবল নিয়ম নয়—বরং রোগীর নিরাপত্তা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক সার্জারির আগে না খাওয়ার পেছনের আসল কারণ।
✰সার্জারির আগে না খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ
পুষ্টিবিদ কানিকা মালহোত্রা জানান, অস্ত্রোপচারের আগে উপবাস থাকার নিয়মটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় “NPO” (Nothing Per Oral)—মানে মুখ দিয়ে কিছু খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ।
তিনি বলেন, “অস্ত্রোপচারের আগে অন্তত ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা কোনো শক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে পানি বা স্বচ্ছ তরল নেওয়া যেতে পারে, তবে কঠিন খাবার একেবারেই নয়।”
জুপিটার হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অমিত সরাফ ব্যাখ্যা করেন—
“যখন অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয়, তখন শরীরের স্বাভাবিক রিফ্লেক্স যেমন গেলা ও কাশি দেওয়ার ক্ষমতা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তখন যদি পেটে খাবার বা তরল কিছু থেকে যায়, সেগুলো ওপরে উঠে ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে, ফলে শ্বাসরোধ বা ‘অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া’ হতে পারে। তাই পেট খালি রাখা সার্জারিকে নিরাপদ করে তোলে।
✰সব সার্জারিতেই কি খাওয়া নিষিদ্ধ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট বা বড়—প্রায় সব ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেই উপবাসের নিয়ম মানা জরুরি।
পার্থক্য শুধু উপবাসের সময়ে; সেটি নির্ভর করে সার্জারির ধরন, রোগীর বয়স এবং শারীরিক অবস্থার ওপর।
ছোট সার্জারির ক্ষেত্রে সাধারণত ৬–৮ ঘণ্টা উপবাস যথেষ্ট,
আর বড় সার্জারির আগে তা ১০–১২ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
✰নিয়ম মানলে কী হয়
✅ শরীর খাবার সম্পূর্ণ হজম করে পেট খালি করতে সময় পায়।
✅ সার্জারির সময় শ্বাসনালি সুরক্ষিত থাকে।
✅ অ্যানেস্থেশিয়া নিরাপদে দেওয়া যায়।
✅ অপারেশনের পর বমি বা বমি-বমি ভাবের ঝুঁকি কমে।
✅ রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
গ্লেনিগলস হাসপাতালের প্রধান সার্জন ডা. স্বরূপ স্বরাজ পাল বলেন,
অস্ত্রোপচারের আগে উপবাস রাখলে সার্জারি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং (postoperative) জটিলতা অনেক কমে যায়।
✰কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
1. চা বা হালকা নাস্তা ‘নিরাপদ’ মনে করা ভুল—এগুলোতেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
2. সার্জারির আগে যদি ভুলবশত কিছু খাওয়া হয়ে যায়, অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে। লুকিয়ে রাখলে বিপদ হতে পারে।
3. কিছু ওষুধ উপবাস অবস্থাতেও সামান্য পানির সঙ্গে নিতে হয়—চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলা জরুরি।
4. এই নিয়ম শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব, সংক্ষপে বললে,
সার্জারির আগে না খাওয়া কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি শরীরের সুরক্ষার এক বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।
অ্যানেস্থেশিয়াকে নিরাপদ করা, শ্বাসনালিকে সুরক্ষিত রাখা এবং দ্রুত আরোগ্য নিশ্চিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
তাই চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী উপবাস থাকা মানে নিজের জীবনকেই নিরাপদ রাখা।
সূত্র: Indian Express ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে পুনর্লিখিত


Post a Comment